বয়স কমিয়ে শেষ পর্যন্ত আমাদের ফায়দা কি???
আমাদের ব্যাচের অনেক ছেলেপেলের ফেসবুকে জন্মতারিখ দেয়া দেখলাম ১৯৯০
সালে। আমি স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম ১৯৯৩ সালে এবং আমার মনে হয় আমাদের
ব্যাচের অধিকাংশ ছেলে-পেলেরই এই সময়ে শিক্ষাজীবন শুরু।তার মানে কি যারা
দাবী করে ১৯৯০ সালে তাদের জন্ম তারা তিন বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই স্কুলে
ভর্তি হয়েছে???
তার আগে দেখে নেই স্কুলে যাওয়ার মিনিমাম রিকোয়ারমেন্টগুলা।
এক।এখন
যদিও স্কুলগুলোতে ভর্তি পরীক্ষা হয় না এবং শুনতে পাই ইদানিং স্কুলে ভর্তি
নিয়ে যথেষ্ট দুর্নীতি হচ্ছে, তবে সেটা আমার আলোচ্য বিষয় নয়। আমাদের
সময়ে(আমি বলছি ১৯৯৩-৯৪ সালের কথা) স্কুলগুলোতে ভর্তি পরীক্ষা হত এবং
মিনিমাম লেখাপড়া না করলে যেমনঃ অ-আ, ক-খ,A-Z, ১-১০০ ইত্যাদি আগে থেকেই না
শিখলে কারো পক্ষে ভাল কোন স্কুলে সুযোগ পাওয়া সম্ভব ছিল না(এটা চট্টগ্রাম
শহরের বাস্তবতা এবং আমার মনে হয় উন্নত শহরগুলোর চিত্রও একই ছিল।) অর্থাৎ
একটা ছেলে ঘর থেকেই মিনিমাম পড়ালেখা শিখে ভর্তি যুদ্ধে নামতে বাধ্য
হচ্ছে।নাহলে ভবিষ্যত ঢেকে যাচ্ছে অন্ধকারে।
আমারতো মনে হয়
না দুই আড়াই বছর বয়সে কারো ব্রেন পড়ালেখা করার মত ডেভেলপ করে।অনেকেরতো
মুখের কথাই তখনো পরিষ্কার হয় না।আর স্কুলে গিয়ে পড়ালেখা করা তো দূরের
কথা।আর তাছাড়া মা-বাবাকে ছেড়ে কয়েক ঘন্টা স্কুলে থাকার মত ম্যাচিউরিটিও
তাদের আসে না।দুই বছর বয়সে স্কুলে যাওয়াটা কোনভাবেই বাস্তবসম্মত নয়।
তাহলে এই ছেলেপেলেগুলা কিভাবে দুই আড়াই বছরে স্কুলে গেল?
সহজ
কথায় অবশ্যই এখানে বয়স চুরির একটা ব্যাপার আছে। আর এর প্রধান কারণ মূলত
আর্থিক। সব বাবা-মাই ভাবে যেহেতু ছেলেকে একদিন অবসরে যেতে হবে তাই বয়স
কমিয়ে দিলে ছেলে বেশিদিন চাকরী করতে পারবে। আর যারা সরকারী চাকরী করতে চান
তাদের ক্ষেত্রে আছে বিসিএসের চিন্তা।বয়স কম হলে বেশিবার বিসিএস দেয়া
যাবে।সরকারী চাকরীর সুযোগ বাড়বে।আর এটা কে না জানে এদেশে একবার সরকারী হলে
মৃত্যু ছাড়া আর কোনভাবেই চাকরী যাওয়া সম্ভব নয়।সারাজীবনের আর্থিক
নিরাপত্তা।
এই বয়স কমানোটা কাজে লাগে বিয়ের ক্ষেত্রেও।ছেলে অল্প বয়সে প্রতিষ্ঠিত-এটা প্রমান করা গেলে বিয়ের বাজারে ছেলের দাম বেড়ে যায় বহুগুন।ছেলের দোষগুন যা-ই থাক।
আর
মেয়েদের বয়স কমানো নিয়ে যে কত গল্প প্রচলিত সেটাতো আমরা সবাই জানি।এখনে
খালি ছোট্ট একটা গল্প বলব।এক মহিলা অ্যাকসিডেন্ট করেছেন।মারাত্মকভাবে
আহত।মহিলা যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। হাসপাতালে তাকে পৌছে দেয়ার জন্য কোন
যানবাহন পাওয়া যাচ্ছে না।ট্রাফিক সার্জন সাহায্যের জন্য ফোন করেছেন
হেডকোয়ার্টারে।ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বললেন, মহিলার বয়স আনুমানিক
পয়ত্রিশ এবং তিনি মারাত্মকভাবে আহত।শত যন্ত্রনার মাঝে মহিলা কোনরকমে বলে
উঠলেন , আমার বয়স পঁচিশ!!!!!!!!!!!!!!!
আরেকটা ঘটনা মনে
পড়ল।২০০৪ সালের কথা। ভাইয়ারা সে বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবেন। হঠাৎ পুরো
কলেজিয়েট স্কুল তোলপাড়। কেন? কারণ উপরের দিকের এক ছাত্রের রেজিস্ট্রেশন
কার্ড আসে নাই।ঘটনা কি? ছেলেতো টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করে নাই।আসল ঘটনা ছিল
ছেলের বয়স এতই কমানো হয়েছিল যে দেখা গেল ২০০৪ সালের মার্চে(যখন এসএসসি
শুরু হবে) তখনও ছেলের বয়স ১৪ বছর ২ মাস হয় নাই (সরকারীভাবে এসএসসি
পরীক্ষা দেয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৪ বছর ২ মাস)।
উন্নত বিশ্বে
হাসপাতালগুলোতে শিশু জন্মের সাথে সাথেই তার জন্মনিবন্ধন করা হয়।ফলে বয়স
চুরির কোন সুযোগ নেই।কারণ এর সাথে দেশের নাগরিকত্ব এবং আরো কিছু
গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার জড়িত।আমার মনে হয় আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতেও এই
ব্যবস্থা করা উচিত।
যে কারনে এই নোট লেখা তাই-ই বলা হল না।
সার্টিফিকেটে বয়স কমিয়ে এর সুবিধা সবাই নেবে- আমিও এর ব্যতিক্রম নই। আমার
শুধু খারাপ লাগে যখন দেখি ফেসবুকেও এরা বয়স কমিয়ে শিশু সাজতে
চায়।ফেসবুকে কমিয়ে লাভটা কি???
যারা বয়স কমিয়ে দুধের শিশু সাজতে চায় তাদের সকলকে গদাম।
--------------------------------------------------------------------------------
একটি আমি তুমি আমরা প্রোডাশন। কপি পেস্ট মারলে কিন্তু খবর করে দিব।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন